এইচআইতি (HIV) ও এইডস (AIDS) কী । এইচআইভি বা এইডস কিভাবে ছড়ায় ও থেকে বাচার উপায় কি কি? (What are HIV and AIDS? What are the ways to spread HIV or AIDS?)
এইচআইতি (HIV) ও এইডস (AIDS) কী (What is HIV and AIDS?)
এইচআইভি ও এইডস দুটি ইংরেজি শব্দ। শব্দ দুটির পূর্ণাংগ রূপ হচ্ছে- Human Immuno Deficiency Virus (HIV) এবং Acquired Immune Deficiency Syndrome (AIDS)। এইচআইভি একটি অতি ক্ষুদ্র বিশেষ ধরনের ভাইরাস যা কোনাে মানুষের শরীরে নির্দিষ্ট কয়েকটি উপায়ে প্রবেশ করে রক্তের শ্বেতকণিকা ধ্বংসের মাধ্যমে তার রােগ প্রতিরােধ ক্ষমতা নষ্ট করে দেয়। তখন সে ব্যক্তি নানা ধরনের রােগ যেমন ডায়রিয়া, যক্ষ্মা, নিউমােনিয়া প্রভৃতি রােগে ঘন ঘন আক্রান্ত হয় এবং কোনাে চিকিৎসায় এ সমস্ত রােগ ভালাে হয় না। এইচআইভি সংক্রমিত কোনাে ব্যক্তির এরূপ অবস্থাকে এইডস (AIDS) বলে। এইচআইভি কোনাে ব্যক্তির শরীরের প্রবেশের পর সাথে সাথে কোনাে লক্ষণ দেখা দেয় না। এইডস হিসেবে প্রকাশ পেতে বেশ কিছুদিন সময় লাগে। সাধারণত এটা মনে করা হয়ে থাকে যে এইচআইভি সংক্রমণের শুরু থেকে এইডস হওয়ার সময় ৬ মাস থেকে বেশ কয়েক বছর হতে পারে। কোনাে কোনাে ক্ষেত্রে ৫ থেকে ১০ বছর অথবা তারও বেশি সময় পরে এইডস ধরা পড়ে। এই সময়কালকে সুপ্তাবস্থা বলে। এই সময়ের মধ্যে এইচআইভি আক্রান্ত ব্যক্তির মাধ্যমে সুস্থ ব্যক্তি সংক্রমিত হতে পারে।
বাংলাদেশে এইচআইভি ও এইডস এর ঝুঁকি এবং ঝুঁকিমুক্ত থাকার উপায়
এইডস একটি আর্থসামাজিক ও জনস্বাস্থ্য সমস্যা। বাংলাদেশেও এইডস-এর প্রাদুর্ভাব ঘটেছে। তবে সাধারণ জনগণের মধ্যে এটি এখনও মারাত্মক আকার ধারণ করেনি। উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ জনগােষ্ঠীর কারণে অচিরেই আমাদের দেশেও এইডস মারাত্মক রূপ নিতে পারে। যেহেতু প্রতিকারহীন এ রােগের চরম পরিণতি মৃত্যু, তাই সকলকে বিশেষ করে কিশােরী বা অল্পবয়সী মেয়েদেরকে এ বিষয়ে বিশেষভাবে সচেতন হতে হবে এবং সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। কারণ বাংলাদেশের কিশােরীরাই কিশােরদের তুলনায় সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।
যে সব কারণে কিশোরীরাই বেশি এইচআইভি ও এইডস এ আকান্ত হয়
কিশোরীরাই বেশি এইচআইভি ও এইডস এ আকান্ত হওয়ার প্রধান কারণসমূহ হচ্ছে
১। আর্থ-সামাজিক কাঠামােতে মেয়েদের দুর্বল অবস্থান।
২। মেয়েরা এইচআইভি/এইডস বিষয়ে ছেলেদের তুলনায় কম অবহিত।
৩। নারী-পুরুষ বৈষম্যের কারণে পুরুষ দ্বারা মেয়েদের নিগৃহীত হওয়া।
৪। মেয়েদের অনিরাপদ যৌন সম্পর্ক স্থাপনে বাধাদানের ক্ষমতার অভাব।
৫। মেয়েদের বিশেষ শারীরিক বৈশিষ্ট্য।
৬। অনিরাপদ দৈহিক সম্পর্ক ইত্যাদি।
বাংলাদেশের মােট জনসংখ্যার এক-চতুর্থাংশ হচ্ছে ১০ থেকে ১৯ বছর বয়সী কিশাের-কিশােরী। বয়ঃসন্ধিকালে কিশাের-কিশােরীদের শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তনের ফলে তাদের চিন্তা ও আচরণে অনেক কৌতূহল জন্মে। পরিবারের বড়দের কাছে এসব বিষয়ে কোন প্রশ্ন করতে পারে না। তাই তারা অনেক বেশি আবেগপ্রবণ থাকে এবং অনেকে অনিরাপদ দৈহিক সম্পর্ক স্থাপনে আগ্রহী হয়ে ওঠে। এ রকম পরিস্থিতিতে তারা এইচআইভি সংক্রমণের ঝুঁকিতে পড়ে যায়।
এইচআইভি বা এইডস কিভাবে ছড়ায়
HIV আক্রান্ত মানুষের শরীরে এইচআইভি ভাইরাস বীর্যে, যােনিরসে, রক্তে ও মায়ের দুধে বাস করে। এই চার জাতীয় তরল পদার্থের আদান-প্রদানের মাধ্যমে এইচআইভি সংক্রমিত হয়। অর্থাৎ আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত, বীর্য বা যােনিরস অন্য মানুষের শরীরে প্রবেশের সুযােগ সৃষ্টি হলে এইচআইভির সংক্রমণ ঘটে। এইচআইভি সংক্রমণের ঝুঁকিপূর্ণ আচরণসমূহ হচ্ছে
(ক) মাদকগ্রহণ বা অন্য কোনাে প্রয়ােজনে ইনজেকশনের একই সুচ ও সিরিঞ্জ একাধিক ব্যক্তি কর্তৃক ব্যবহার।
(খ) অপরীক্ষিত রক্ত শরীরে গ্রহণ।
(গ) অপারেশনের সময় অপরিশােধিত জীবাণুযুক্ত যন্ত্রপাতি ব্যবহার।
(ঘ) এইচআইভি আক্রান্ত মায়ের সন্তান গ্রহণ।
(ঙ) অনিরাপদ দৈহিক সম্পর্ক স্থাপন।
এইচআইভি এবং এইডস থেকে বাচার উপায় কি কি?
১. ঝুঁকিপূর্ণ আচরণ : পরিহার করতে হবে।
২. আবেগ প্রশমন : প্রধানত কৌতূহল ও আবেগের বশবর্তী হয়েই কিশাের-কিশােরীরা ঝুঁকিপূর্ণ আচরণ করে। | এজন্য কিশাের-কিশােরীদের কৌতুহল বা আবেগ প্রশমনের দক্ষতা অর্জন করা অত্যন্ত জরুরি। বড়দের সাথে বিশেষ করে মা-বাবার সাথে সব বিষয়ে খােলামেলা কথা বলতে পারলে এই কৌতূহল দূর ও আকো প্রশমিত হয়।
২. আবেগ প্রশমন : প্রধানত কৌতূহল ও আবেগের বশবর্তী হয়েই কিশাের-কিশােরীরা ঝুঁকিপূর্ণ আচরণ করে। | এজন্য কিশাের-কিশােরীদের কৌতুহল বা আবেগ প্রশমনের দক্ষতা অর্জন করা অত্যন্ত জরুরি। বড়দের সাথে বিশেষ করে মা-বাবার সাথে সব বিষয়ে খােলামেলা কথা বলতে পারলে এই কৌতূহল দূর ও আকো প্রশমিত হয়।
৩. ঝুঁকিপূর্ণ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান : অনাকাঙিক্ষত বা অনৈতিক প্রস্তাবে ‘না’ বলার দক্ষতা ও কৌশল অবলম্বন করতে হবে।
৪. ধর্মীয় ও সামাজিক অনুশাসন ও রীতিনীতি মেনে চলা : নেশা করা বা মাদকাসক্ত হওয়া, অনৈতিক দৈহিক বা যৌন সম্পর্ক ইত্যাদি কোনাে ধর্ম বা সমাজ অনুমােদন করে না। তাই ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চললে এইডসে আক্রান্ত হওয়ার আশংকা অনেক কমে যায়।
৫. এইচআইভি এবং এইডস সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি : এইচআইভি এবং এইডস-এর ভয়াবহতা সম্পর্কে ব্যাপক গণসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। এই উদ্দেশ্য গণমাধ্যমে ব্যাপক প্রচার, র্যালির আয়ােজন, ইলেকট্রনিক মাধ্যম ব্যবহার করা যেতে পারে। বাংলাদেশের লােকজ সংস্কৃতির ধারক বয়াতির গ্রামীণ পালাগান, পথ নাটক, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে জনগণকে সহজে উদ্বুদ্ধ করা যায়। এসব কার্যক্রম ব্যক্তির আত্মসচেতনতা সৃষ্টি এবং জনগণের মধ্যে গণ সচেতনতা বৃদ্ধিতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
৫. এইচআইভি এবং এইডস সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি : এইচআইভি এবং এইডস-এর ভয়াবহতা সম্পর্কে ব্যাপক গণসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। এই উদ্দেশ্য গণমাধ্যমে ব্যাপক প্রচার, র্যালির আয়ােজন, ইলেকট্রনিক মাধ্যম ব্যবহার করা যেতে পারে। বাংলাদেশের লােকজ সংস্কৃতির ধারক বয়াতির গ্রামীণ পালাগান, পথ নাটক, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে জনগণকে সহজে উদ্বুদ্ধ করা যায়। এসব কার্যক্রম ব্যক্তির আত্মসচেতনতা সৃষ্টি এবং জনগণের মধ্যে গণ সচেতনতা বৃদ্ধিতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।


%20%E0%A6%93%20%E0%A6%8F%E0%A6%87%E0%A6%A1%E0%A6%B8%20(AIDS)%20%E0%A6%95%E0%A7%80%20%E0%A5%A4%20%E0%A6%8F%E0%A6%87%E0%A6%9A%E0%A6%86%E0%A6%87%E0%A6%AD%E0%A6%BF%20%E0%A6%AC%E0%A6%BE%20%E0%A6%8F%E0%A6%87%E0%A6%A1%E0%A6%B8%20%E0%A6%95%E0%A6%BF%E0%A6%AD%E0%A6%BE%E0%A6%AC%E0%A7%87%20%E0%A6%9B%E0%A6%A1%E0%A6%BC%E0%A6%BE%E0%A6%AF%E0%A6%BC%20%E0%A6%93%20%E0%A6%A5%E0%A7%87%E0%A6%95%E0%A7%87%20%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%9A%E0%A6%BE%E0%A6%B0%20%E0%A6%89%E0%A6%AA%E0%A6%BE%E0%A6%AF%E0%A6%BC%20%E0%A6%95%E0%A6%BF%20%E0%A6%95%E0%A6%BF.png)