এইচআইতি (HIV) ও এইডস (AIDS) কী । এইডস রোগের লক্ষণ গুলো কি কি ও কোন উপায়ে এইচআইভি-এইডস ছড়ায় না । (What is HIV and AIDS? What are the symptoms of AIDS and how does HIV-AIDS not spread?)
![]() |
| এইচআইতি (HIV) ও এইডস (AIDS) কী । এইডস রোগের লক্ষণ গুলো কি কি ও কোন উপায়ে এইচআইভি-এইডস ছড়ায় না |
HIV-AIDS-এর ধারণা ও বিস্তার (The concept and spread of HIV-AIDS)
বিশ্বে যে কয়টি ঘাতক ব্যাধিতে মানুষ বেশি আক্রান্ত হচ্ছে তার মধ্যে এইডস অন্যতম। বিভিন্ন রােগের প্রতিষেধক বা নিরাময় ব্যবস্থা থাকলেও এইডস সম্পূর্ণরূপে নিরাময় করতে পারে এমন ঔষধ এখনও তেমনভাবে আবিষ্কার করা যায়নি। ফলে এইডস-এর পরিণাম নিশ্চিত মৃত্যু। আমাদের প্রত্যেকের শরীরের নিজস্ব রােগ প্রতিরােধ ক্ষমতা আছে। রােগ প্রতিরােধ ক্ষমতা থাকার কারণে শরীরে কোনাে রােগের জীবাণু প্রবেশ করলে সেটা সহজে শরীরের কোনাে ক্ষতি করতে পারে না। কিনতু এমন কিছু ভাইরাস আছে যা শরীরের রােগ প্রতিরােধ ক্ষমতাকে আস্তে আস্তে দুর্বল করে এবং এক সময় তা সম্পূর্ণভাবেই নিঃশেষ করে ফেলতে পারে। এমনই একটি ভাইরাসের নাম এইচআইভি (HIV)।
এইচআইতি (HIV) ও এইডস (AIDS) কী (What is HIV and AIDS?)
এইচআইভি ও এইডস দুটি ইংরেজি শব্দ। শব্দ দুটির পূর্ণাংগ রূপ হচ্ছে- Human Immuno Deficiency Virus (HIV) এবং Acquired Immune Deficiency Syndrome (AIDS)। এইচআইভি একটি অতি ক্ষুদ্র বিশেষ ধরনের ভাইরাস যা কোনাে মানুষের শরীরে নির্দিষ্ট কয়েকটি উপায়ে প্রবেশ করে রক্তের শ্বেতকণিকা ধ্বংসের মাধ্যমে তার রােগ প্রতিরােধ ক্ষমতা নষ্ট করে দেয়। তখন সে ব্যক্তি নানা ধরনের রােগ যেমন ডায়রিয়া, যক্ষ্মা, নিউমােনিয়া প্রভৃতি রােগে ঘন ঘন আক্রান্ত হয় এবং কোনাে চিকিৎসায় এ সমস্ত রােগ ভালাে হয় না। এইচআইভি সংক্রমিত কোনাে ব্যক্তির এরূপ অবস্থাকে এইডস (AIDS) বলে। এইচআইভি কোনাে ব্যক্তির শরীরের প্রবেশের পর সাথে সাথে কোনাে লক্ষণ দেখা দেয় না। এইডস হিসেবে প্রকাশ পেতে বেশ কিছুদিন সময় লাগে। সাধারণত এটা মনে করা হয়ে থাকে যে এইচআইভি সংক্রমণের শুরু থেকে এইডস হওয়ার সময় ৬ মাস থেকে বেশ কয়েক বছর হতে পারে। কোনাে কোনাে ক্ষেত্রে ৫ থেকে ১০ বছর অথবা তারও বেশি সময় পরে এইডস ধরা পড়ে। এই সময়কালকে সুপ্তাবস্থা বলে। এই সময়ের মধ্যে এইচআইভি আক্রান্ত ব্যক্তির মাধ্যমে সুস্থ ব্যক্তি সংক্রমিত হতে পারে।
এইচআইভি এইডস এর লক্ষণ কি (What are the symptoms of AIDS?)
এইডস-এর নির্দিষ্ট কোনাে লক্ষণ নেই। তবে এইডস আক্রান্ত ব্যক্তি অন্য যে রােগে আক্রান্ত হয় সে রােগের লক্ষণ দেখা যায়। এর মধ্যে কিছু সাধারণ লক্ষণ আছে। যেমন-
- এক মাসের বেশি সময় ধরে এক টানা কাশি,
- সারা দেহে চুলকানিজনিত চর্মরােগ,
- মুখ ও গলায় এক ধরনের ঘা,
- লসিকাগ্রন্থি ফুলে যাওয়া,
- স্মরণশক্তি ও বুদ্ধিমত্তা কমে যাওয়া ইত্যাদি।
এইডস-এর প্রধান লক্ষণগুলাে কি কি? (What are the main symptoms of AIDS?)
- শরীরের ওজন দ্রুত হ্রাস পাওয়া।
- এক মাসের বেশি সময় ধরে একটানা বা থেমে থেমে পাতলা পায়খানা হওয়া।
- বার বার জ্বর হওয়া বা রাতে শরীরে অতিরিক্ত ঘাম হওয়া।
- অতিরিক্ত ক্লান্তি বা অবসাদ অনুভব করা।
- শুকনা কাশি হওয়া ইত্যাদি।
উল্লেখ্য যে, কারাের মধ্যে উপরের একাধিক লক্ষণ দেখা দিলেই তার এইডস হয়েছে বলে নিশ্চিতভাবে বলা যাবে । তবে অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে HIV সংক্রমণের ব্যাপারে নিশ্চিত হতে হবে।
এইচআইতি এবং এইডস-এর বিস্তার (The spread of HIV and AIDS)
এইচআইভি একটি নীরব ঘাতক। এই নীরব ঘাতকের বিরুদ্ধে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়ার আগে এইচআইভি ও এইডস কীভাবে বিস্তার লাভ করে তা আমাদের জানা প্রয়ােজন। বায়ু, পানি, খাদ্য বা কারাের সংস্পর্শে এইচআইভি ছড়ায় না। HIV আক্রান্ত মানুষের শরীরের ভিতরে রক্ত, বীর্য, যােনিরস, মায়ের বুকের দুধ এগুলােতে HIV বাস করে।
সুনির্দিষ্টভাবে যে যে উপায়ে এইচআইভি বিস্তার লাভ
HIV আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত, বীর্য, যােনিরস সুস্থ ব্যক্তির দেহে প্রবেশ করলে বা মায়ের বুকের দুধ খেলে এইচআইভি সংক্রমণ ঘটে। সুনির্দিষ্টভাবে যে যে উপায়ে এইচআইভি বিস্তার লাভ করে, তা হলাে :
১। অনৈতিক ও অনিরাপদ দৈহিক মিলন- এইচআইভি ছড়ানাের সবচেয়ে বড় কারণ অনিরাপদ যৌন সম্পর্ক। প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে সারা বিশ্বের এইচআইভি সংক্রমিত ব্যক্তিদের ৮০% অনিরাপদ যৌন মিলনের কারণে হয়েছে। আক্রান্ত ব্যক্তির বীর্য বা যােনিরসের মাধ্যমে যৌনসঙ্গীর দেহে এইডস-এর ভাইরাস প্রবেশ করে।
২। আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত গ্রহণ-এইডস আক্রান্ত কোনাে মানুষের অঙ্গ প্রতিস্থাপন কিংবা তার ব্যবহৃত সুচসিরিঞ্জ অন্য মানুষ ব্যবহার করলে ব্যবহারকারীর শরীরে এই ভাইরাস ছড়িয়ে যেতে পারে। মাদকাসক্ত ব্যক্তিরা প্রায়ই একই সুচ ও সিরিজ ব্যবহার করে মাদক গ্রহণ করে থাকে।
৩। মায়ের শরীর থেকে শিশুর শরীরে সংক্রমণ এইচআইভি ও এইডস আক্রান্ত মায়ের নিকট থেকে তিনটি পর্যায়ে শিশুর শরীরে এর ভাইরাস সংক্রমিত হতে পারে। যেমন
(ক) গর্ভকালীন সময়ে।
(খ) প্রসবকালীন সময়ে।
(গ) মায়ের দুধ পান করে। |
যে সকল উপায়ে এইচআইভি-এইডস ছড়ায় না (The ways in which HIV-AIDS is not spread)
যে সব কারণে এইচআইভি-এইডস-এর বিস্তার লাভ করে না তা নিচে উল্লেখ করা হলাে
(১) হাঁচি, কাশি, কফ-থুতু বা শ্বাস প্রশ্বাসের মাধ্যমে।
(২) এক সাথে এক ঘরে বসবাস করলে, একসাথে বা একই থালা-বাসনে খাওয়া দাওয়া করলে।
(৩) একসাথে খেলাধুলা বা একই ক্লাসে পড়াশােনা করলে।
(৪) আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে হাত মেলালে, কোলাকুলি করলে এবং তার কাপড় ব্যবহার করলে।
(৫) মশা বা কোনাে পােকা-মাকড়ের কামড়ে।
(৬) আক্রান্ত ব্যক্তির সেবা করলে।
(৭) একই গােসলখানা বা শৌচাগার ব্যবহার করলে।
এইচআইভি ও এইডস এর মতাে মরণব্যাধির হাত থেকে রক্ষা পেতে হলে সকলের এ বিষয়ে জানতে হবে এবং সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।


%20%E0%A6%93%20%E0%A6%8F%E0%A6%87%E0%A6%A1%E0%A6%B8%20(AIDS)%20%E0%A6%95%E0%A7%80%20%E0%A5%A4%20%E0%A6%8F%E0%A6%87%E0%A6%A1%E0%A6%B8%20%E0%A6%B0%E0%A7%8B%E0%A6%97%E0%A7%87%E0%A6%B0%20%E0%A6%B2%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%B7%E0%A6%A3%20%E0%A6%97%E0%A7%81%E0%A6%B2%E0%A7%8B%20%E0%A6%95%E0%A6%BF%20%E0%A6%95%E0%A6%BF%20%E0%A6%93%20%E0%A6%95%E0%A7%8B%E0%A6%A8%20%E0%A6%89%E0%A6%AA%E0%A6%BE%E0%A6%AF%E0%A6%BC%E0%A7%87%20%E0%A6%8F%E0%A6%87%E0%A6%9A%E0%A6%86%E0%A6%87%E0%A6%AD%E0%A6%BF-%E0%A6%8F%E0%A6%87%E0%A6%A1%E0%A6%B8%20%E0%A6%9B%E0%A6%A1%E0%A6%BC%E0%A6%BE%E0%A6%AF%E0%A6%BC%20%E0%A6%A8%E0%A6%BE.webp)