সরিষা চাষ পদ্ধতি । সরিষা চাষ করার পদ্ধতি সম্পকে এই পোস্টে আলোচনা করা হয়েছে।
সরিয়া চাষ করার জন্য বিভিন্ন ধাপ রযেছে । যেমন: জমি ও মাটি নির্বাচন, জমি তৈরি, সার প্রয়ােগ, বীজ বপন পদ্ধতি, পৃথকীকরণ দূরত্ব, রােগবালাই দমন, পােকামাকড় দমন: সরিষা চাষ পদ্ধতি ।
![]() |
| সরিষা চাষ পদ্ধতি । সরিষা চাষ করার পদ্ধতি |

সরিষা সম্পকে কিছু তথ্য: সরিষা চাষ পদ্ধতি
সরিষা বীজ উৎপাদন সরিষা বাংলাদেশের প্রধান তৈলবীজ ফসল। সরিষা বীজে ৪০-৪৪% তেল থাকে। খৈলে প্রায় ৪০% আমিষ থাকে। তাই খৈল গরু ও মহিষের জন্য খুব পুষ্টিকর খাদ্য। খৈল একটি উৎকৃষ্ট জৈব সার। বাংলাদেশে সাধারনত রবি মৌসুমে সরিষা চাষ করা হয়।সরিষা চাষ পদ্ধতি । সরিষা চাষ করার পদ্ধতি
সরিষা চাষ পদ্ধতি । সরিষা চাষ করার পদ্ধতি নিচে আলোচনা করা হল:
১. জমি ও মাটি নির্বাচন: সরিষা চাষ পদ্ধতি
উচ, মাঝারি উঁচু এবং নিচু জমি যেখানে বৃষ্টি বা সেচের পানি জমে না অথবা বন্যার পানি আগাম সরে যায় সেখানে সরিষার আবাদ করা যায়। দোঁআশ ও এঁটেল দোআশ এবং বর্ষার পলি পড়ে এমন মাটি সরিষা চাষের জন্য নির্বাচন করতে হবে।
২. জমি তৈরি: সরিষা চাষ পদ্ধতি
জমি ৪-৫ বার ভাল করে চাষ ও মই দিতে হবে। এমনভাবে জমি সমতল করতে হবে যাতে অতিরিক্ত পানি বেরিয়ে যায়। মাটি অত্যন্ত মিহি হতে হবে কারণ সরিষা বীজ খুব ছােট।
৩. সার প্রয়ােগ: সরিষা চাষ পদ্ধতি
জাত, মাটি ও মাটিতে রসের তারতম্য অনুসারে সার দিতে হবে। ইউরিয়া সার অর্ধেক ও অন্যান্য সমুদয় সার বপনের আগে এবং বাকি অর্ধেক ইউরিয়া গাছে ফুল আসার সময় উপরি প্রয়ােগ করতে হবে। সার উপরি প্রয়ােগের জন্য মাটিতে রস থাকা দরকার।
৪. বীজ বপন পদ্ধতি: সরিষা চাষ পদ্ধতি
অক্টোবর-নভেম্বর মাস সরিষার বীজ বপনের উপযুক্ত সময়। তবে মধ্য অক্টোবর থেকে শেষ অক্টোবর এই সময়ের মধ্যে সরিষা বীজ বপন করা উত্তম। জাতভেদে বীজের হার ৭-৯ কেজি প্রতি হেক্টরে। সাধারণত সরিষা বীজ ছিটিয়ে বােনা হয়। জমিতে সমভাবে ছিটানাের জন্য বীজের সাথে ছাই, বালি বা গুড়া মাটির যে কোন একটি মিশিয়ে বপন করা ভাল।
৫. আন্ত:পরিচর্যা: সরিষা চাষ পদ্ধতি
জমিতে বীজ বপনের ১৫-২০ দিন পর একবার এবং ফুল আসার সময় দ্বিতীয়বার নিড়ানি দিতে হবে জমিতে রসের পরিমাণ কমে গেলে সেচ দিতে হবে বিশেষ করে উঁচু জমিতে ১-২ বার সেচ দেয়া প্রয়ােজন। একবার সেচ দিলে সাধারণত বীজ বােনার ২৫-৩০ দিন পর (ফুল ফোটার শুরুতে) দিতে হবে। দু’বার সেচের প্রয়ােজন হলে বীজ বােনার ২৫-৩০ দিন পর প্রথম এবং এবং ৪০-৬০ দিন পর (শুটি বৃদ্ধির সময়) দ্বিতীয় সেচ দেওয়া দরকার।
৬, পৃথকীকরণ দূরত্ব: সরিষা চাষ পদ্ধতি
সরিষা পরপরাগায়নধর্মী ফসল হওয়ায় এর বীজ ফসলের মাঠ একই পরিবারভুক্ত অন্যান্য জাতের ফসল বা একই জাতের ফসলের মাঠ থেকে ১০০০ মিটার দূরে অবস্থিত হতে হবে। এতে করে জাতের বিশুদ্ধতা বজায় থাকবে।
৭. রােগবালাই দমন: সরিষা চাষ পদ্ধতি
অলটারনারিয়া ব্রাসিসি নামক জীবাণু দ্বারা সৃষ্ট অলটারনারিয়া ব্লাইট বা পাতা ঝলসানাে রােগ সরিষার অন্যতম মারাত্মক রােগ। এ রােগ হলে গাছের বয়স্ক পাতায় গাঢ় বাদামি দাগ দেখা যায়, পরে দাগ গাছের কান্ডে শুটি বা বীজে আক্রমণ করে, এ রােগ প্রতিরােধ করতে হলে রােগ প্রতিরােধ ক্ষমতা সম্পন্ন ও রােগমুক্ত বীজ বপন করতে হবে। আক্রান্ত সরিষা ক্ষেতে ২.৫ গ্রাম ক্যাপটেন বা ভিটাভেক্স-২০০ দিয়ে বীজ শােধন করে বপন করতে হয়। এ রােগের আক্রমণ বেশি হলে রােভরাল-৫০, ডাইথেন এম-৪৫ বা এ জাতীয় ঔষধ ২ গ্রাম প্রতি লিটারে মিশিয়ে ১২ দিন পর পর ৩বার স্প্রে করতে হবে।
৮. রােগিং: সরিষা চাষ পদ্ধতি
সরিষা বীজ ফসলের জমিতে বেশ কয়েকবার রােগিং করতে হয়। স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে আগে ফুল আসা গাছ, হলুদ ফুলের মধ্যে সাদা ফুলযুক্ত গাছ, বিজাতীয় বা অন্য জাতের গাছ এবং স্বাভাবিকের চেয়ে লম্বা গাছ উঠিয়ে নষ্ট করে ফেলতে হবে।
৯, পােকামাকড় দমন: সরিষা চাষ পদ্ধতি
জাব পােকা সরিষা ক্ষেতে মারাত্মক ক্ষতি সাধন করে। পূর্ণবয়স্ক ও বাচ্চা পােকা উভয়ই সরিষার পাতা,
কান্ড, ফুল ও ফল হতে রস হতে রস শােষণ করে। এ পােকার আক্রমণ হলে ম্যালথিয়ন ৫৭ ইসি অথবা জুলন ৩৫ ইসি প্রতি লিটার পানিতে ২.০ মিলিমিটার হারে মিশেয়ে সম্পূর্ণ গাছ ভিজিয়ে স্প্রে করতে হবে। কীটনাশক অবশ্যই বিকেলে স্প্রে করতে হবে। সকালের দিকে স্প্রে করলে মৌমাছির ক্ষতি হয়। মৌমাছি পরাগায়নের জন্য উপকারী।
কান্ড, ফুল ও ফল হতে রস হতে রস শােষণ করে। এ পােকার আক্রমণ হলে ম্যালথিয়ন ৫৭ ইসি অথবা জুলন ৩৫ ইসি প্রতি লিটার পানিতে ২.০ মিলিমিটার হারে মিশেয়ে সম্পূর্ণ গাছ ভিজিয়ে স্প্রে করতে হবে। কীটনাশক অবশ্যই বিকেলে স্প্রে করতে হবে। সকালের দিকে স্প্রে করলে মৌমাছির ক্ষতি হয়। মৌমাছি পরাগায়নের জন্য উপকারী।
১০, ফসল সংগ্রহ ও সংরক্ষণ: বিভিন্ন জাতের সরিষা পাকতে বিভিন্ন সময় লাগে। সাধারণত টরি সরিষা পাকতে ৭০-৮০ দিন এবং অন্যান্য সরিষা পাকতে ৯০-১১০ দিন সময় লাগে। গাছের শতকরা ৭০-৮০ ভাগ শুটি পাকলে সকালের ঠান্ডা পরিবেশে কেটে মাড়াইয়ের স্থানে নিতে হবে । তারপর ২-৩ দিন রোদে শুকিয়ে লাঠি দ্বারা পিটিয়ে মাড়াই করতে হয়ে । ফল অতিরিক্ত পাকলে মাঠে ঝরে পড়ার সম্ভাবনা থাকে । মাড়াইয়ের পর বীজ ২/৩ দিন রোদে শুকিয়ে শুকনা বীজ যে কোন পরিষ্কার এবং শুকনো পাত্রে দু বছর পযন্ত সংরক্ষণ করা যায়।


