পবিত্রতা অর্জন ও বিজ্ঞান | Dr Zakir Naik Bangla Lecture
আল্লাহ তাআলার সত্তা পবিত্রতায় পরিপূর্ণ। তিনি সকল অপবিত্রতা থেকে মুক্ত ও পবিত্র । একথা সুস্পষ্ট যে পরিচ্ছন্নতার ওপর আল্লাহর জ্যোতি বিদ্যমান। তাই তিনি পবিত্র। তিনি সকল ষড়যন্ত্র থেকে পবিত্র। কোনাে ধরনের ফেরেবাজি, বিয়কারী এবং হিংসা-বিদ্বেষ যেমন তার সত্তার সাথে সঙ্গত নয় তেমনি কৃপণতা ও সংকীর্ণতার মতাে খারাপ দোষগুলাে থেকেও তিনি সত্তাগতভাৰে পৰিত্র। তার গুণাবলি পবিত্র ও প্রশংসিত। তিনি প্রশংসিত ও সর্বোচ্চ মর্যাদার অধিকারী- মাজীদ । সুতরাং আদেশ হলাে, হে মুসলমানগণ মাখলুক বা সৃষ্ট জীব হওয়ার কারণে তোমাদের পক্ষে যতদূর সম্ভব তােমরাও আল্লাহর চরিত্র এবং গুণাবলি নিজেদের মধ্যে ধারণ কর। অর্থাৎ আল্লাহর চরিত্রে চরিত্রবান হও।এটা স্পষ্ট যে, একজন প্রকৃত আমলকারী মুসলমানের জীবন সকল দিক হতে পাক-পবিত, সকল প্রকারের অনিষ্টকারী জীবাণু থেকে সংরক্ষিত। তিনি সকল রকমের প্রকাশ্য কিংবা অপ্রকাশ্য অপবিত্রতা থেকে পাক-সাফ হয়ে থাকেন। তাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে যে, তিনি হিংসা লালসা মনে রাখবেন না। চুরি-ডাকাতি ও ব্যভিচার করবেন না। গালমন্দ করবেন না। সবসময় সত্য বলবেন এবং মিথ্যা হতে বেঁচে থাকবেন। প্রদর্শনী থেকে নিজেকে রক্ষা করবেন। ফেৱেবৰাজি, ধোকাবাজি কখনও করবেন না। নিজস্ব কাজ ও কথায় সকল মুসলমান নিয়ে যা করে তার উদাহরণ নিজেই হবেন। অপরকে কখনাে কষ্ট দেবেন না এবং ক্ষতি করবেন না। বরং সবসময় অন্যদের সাহায্য ও পথ প্রদর্শনের জন্য তৈরী থাকবেন এবং অন্যদের অধিকার বিনষ্ট করবেন না। দুর্বলদের সহায়তা করবেন, প্রতিবেশীদের সাথে ভালাে আচরণ করবেন।
নবী করীম (স) ইরশাদ করেন-
অর্থঃ প্রকৃত এবং পূর্ণাঙ্গ মুসলমান তিনি যার মুখ এবং হাত হতে অপর মুসলমান নিত্রাপদে থাকে।
আরেকটি হাদীস নবী করীম (স) ঘােষণা করেন, “তোমাদের মাঝে কোনাে ব্যক্তি ততক্ষণ পর্যন্ত পরিপূর্ণ মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত সে নিয়ে মুসলমান ভাইয়ের জন্য ঐ জিনিস না চাইবে যা সে তার নিজের জনা পছন্দ করে। (সহীহ বুখারি)
মুসলমানদের প্রতি নির্দেশ হলাে হালাল খাবে, হারাম থেকে বেঁচে থাকবে, নিজের চিন্তাধারাকে পাক-পবিত্র রাখবে। দেহকে পবিত্র রাখবে, পােশাক-পরিচ্ছন্ন রাখবে, কথা ও কাজ পবিত্র করবে, মিথ্যা বলবে না এবং কার্যাবলি পবিত্র রাখবে। যেন এ অনুভূতি হয় যে, প্রত্যেক মুসলমান সম্পূর্ণভাবে প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য সকল প্রকারের অপবিত্রতা থেকে পবিত্র। ইসলামে নামাযের বৈশিষ্ট্য কেন্দ্রীয় মর্যাদায় অভিষিক্ত। নামায আদায়ে স্থান পূর্ব শর্ত হলো, ব্যক্তির দেহ পাক-পবিত্র হবে। তার পােশাক পবিত্র হতে হবে, তিনি ওযু সম্পন্ন করবেন। নামাযের আগে সব রকমের শারীরিক পবিত্রতা প্রয়ােজন।
নবী করীম (স) ঘােষণা করেন-
১ । . অর্থ ও পবিত্রতা ঈমানের অঙ্গ। (সহীহ মুসলিম) অন্যত্র ঘােষণা করেন ?
‘পবিত্রতা ঈমানের অর্ধেক।'(সুনানে তিরমিযী)। এতে স্পষ্ট হলাে যে, একজন মুসলমানের জন্য তার ঈমানের অংশ হলাে সবসময় পবিত্র থাকা। ইসলাম প্রকাশ ও অপ্রকাশ পবিত্রতার দীক্ষা এতটাই দিয়েছে, অমুসলমানদের পথিকৃৎগণও একথা মেনে নিতে বাধ্য হয়েছেন যে, ইসলাম যে পরিমাণ পকিস্তার ওপর জোর দিয়েছে অপর কোনাে ধর্ম তা দিতে পারেনি। তাই ডা, রবার্ট বিথ, বিশ্ব বিখ্যাত সার্জন মাসলামা প্রমুখ লিখেছেন, “আমরা পবিত্রতার আমল ইসলাম হতে শিখেছি।' সবচেয়ে বড় গান্ধা ঐ জিনিস যা মানুষের দেহ থেকে পায়খানা-প্রস্রাবের মাধ্যমে বের হয়। ইসলাম এগুলাে নিগর্ত হওয়ার পর উত্তমরূপে ইস্তিঞ্জা (পত্রিকা) অর্জন করার স্পষ্ট নির্দেশ দেয়। ইসলামে নির্দেশ আছে যে, যদি মানুষের প্রকৃতির ডাক যেমন প্রস্রাব-পায়খানার প্রয়ােজন হয়, তাহলে সবার আগে এ প্রয়ােজন শেষ করে পবিত্রতা অর্কনি তথা ইস্তিঞ্জা করতে হবে।
প্রথমে উত্তমরূপে মাটির ঢেলা দ্বারা পরিষ্কার এবং তারপর দুবার পানি দ্বারা উত্তমরূপে ধেীত করতে হবে। অথবা পুণরায় পানি দ্বারা যথেষ্টভাবে ধুয়ে ফেলতে হবে। পরিষ্কার করার জন্য বাম হাত ব্যবহার করতে হবে। পায়খানা-প্রস্রাব করার সময় কিবলার দিকে পিঠ অথবা মুখ করা যাবে না, চাই সেটা খােলা জায়গা বা ঘর হােক। যদি মনের ভুলে এমন হয় তাহলে মনে হওয়ার সাথে সাথে দিক পরিবর্তন করে নিতে হবে। প্রস্রাব-পায়খানা করার সময় খালি মাথায় যাওয়া যাবে না এবং বাতাসমুখী হয়েও বসা যাবে না।
পায়খানা-প্রস্রাব খানায় যাওয়ার সময় মুস্তাহাব হলাে বাথরুমে প্রবেশের আগে নিচের দুআ পড়া
بسم الله اللهم ان أول من الحب والخبائث
অর্থ : আল্লাহর নামে। হে আল্লাহ, নিশ্চয়ই আমি খৰীস (দুই) পুরুষ জ্বিন এবং নারী জ্বিন থেকে তােমার আশ্রয় চাই। (সহীহ বুখারী)। টয়লেটে পায়খানা করতে সর্বপ্রথমে বাম পা ভেতরে রাখবে, যখন বসার নিকটবর্তী হবে তখন শরীর হতে কাপড় গুছিয়ে নেবে এবং প্রয়োজনের অতিরিক্ত নগ্ন হবে
পা ছড়িয়ে বা-পায়ের ওপর জোর দেবে এবং চুপ থেকে প্রয়ােজন সারবে। যখন শেষ হয়ে যাবে, দুখন পুরু বাম হাতের আঙুল দ্বারা গুপ্তাঙ্গের গোঁড়া থেকে আপার দিকে চাপ দেবে যাতে পেশাবের যে ফোটা ভেতরে রয়েছে তা শরীর হতে বের হয়ে যায়। অতঃপর পানি, মাটির ঢেলা অথবা একের পর অন্যটি দিয়ে পবিত্রতা অর্জন করবে। এর আগে তিনটি ঢেলা দিয়ে অতঃপর পানি দ্বারা পবিত্রতা অর্জন করবে। ডান হাত দ্বারা পানি ঢালবে এবং বাম হাত দ্বারা ধৌত করবে। পানির পাত্র এমন উচুতে রাখবে না যাতে ছিটা শরীরে লাপার সম্ভাবনা থাকে। প্রথমে প্রস্রাবের স্থান ধৌত করবে পরে মলদ্বার। মলদ্বার ধােয়ার সময় শ্বাস-প্রশ্বাসের কাের কমিয়ে দিলে রাখবে এরপর উত্তমরূপে ধোবে, যাতে বােয়রি পর হাতে কোন গন্ধ অবশিষ্ট না থাকে। অতপর কোনাে পবিত্র কাপড় দ্বারা মুছে নেবে। যদি কাপড় না থাকে তাহলে বারবার হাত দিয়ে মুছবে। একথা মনে রাখতে যে, খাড়া হওয়ার আগে শরীর ঢেকে নেবে এবং বের হয়ে আসবে। বের হওয়ার সময় ডান পা প্রথমে বের করবে এবং এ দুআ পড়বে
على ما يثنى التحميل الذي أذهب ما بؤذيني وأم
অর্থ । সকল প্রশংসা সেই আল্লাহর যিনি আমার কাছ হতে কষ্টদায়ক দ্রব্য সরিয়ে নিয়েছেন এবং উপকারী দ্রব্য নিকটবর্তী করেছেন। প্রস্রাব-পায়খানা হতে বের হওয়ার পর আরাে একটি দুআ রাসূল (স) থেকে বর্ণিত হয়েছে। যখন রাসূল (স) হাজত অর্থাৎ, প্রাকৃতিক প্রয়ােজন পূরণ করতেন তখন সে স্থান ত্যাগ করে পড়তেন এL -“হে আল্লাহ আমি আপনার কাছে ক্ষমা প্রাণ। (যাদুল মাআদ) ইস্তিঞ্জা পানি অথবা মাটির ঢেলা দিয়ে অথবা উভয় কর্তৃক করা উচিত। হাড়ি অথবা গােবর ব্যাতীয় জিনিষ ইত্যাদি দ্বারা ইস্তিঞ্জা করা ঠিক নয়। কেননা এগুলাের ভেতর ক্ষতিকর জিনিস থাকে।

