Type Here to Get Search Results !

অটিজম কী । অটিজম এর লক্ষণ , মূল বৈশিষ্ট, অটিজম শিশুদের গুনাবলি ও অটিজম থেকে বাচার উপায়

অটিজম কী, অ্যাসপার্জার্স সিনড্রোম, অটিজম এর লক্ষণ গুলো কি কি? অটিজমের মূল বৈশিষ্ট্যসমূহ, অজিজম শিশুদের ‍কিছু গুন ও সবল দিক এবং অটিজম শিশুদের সাথে যা যা করনীয় তা নিচে বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করা হল।

অটিজম কী, অ্যাসপার্জার্স সিনড্রোম, অটিজম এর লক্ষণ গুলো কি কি? অটিজমের মূল বৈশিষ্ট্যসমূহ, অজিজম শিশুদের ‍কিছু গুন ও সবল দিক এবং অটিজম শিশুদের সাথে যা যা করনীয়

অটিজম কী, অ্যাসপার্জার্স সিনড্রোম, অটিজম এর লক্ষণ গুলো কি কি? অটিজমের মূল বৈশিষ্ট্যসমূহ, অজিজম শিশুদের ‍কিছু গুন ও সবল দিক এবং অটিজম শিশুদের সাথে যা যা করনী



অটিজম (Autism) 

দৈনন্দিন জীবনযাপনে আমরা প্রতিনিয়ত বিভিন্ন সমস্যার মধ্য দিয়ে জীবন অতিবাহিত করি। সুখ-দুঃখ হাসি কান্না আমাদের প্রতিদিনের ঘটনা। একটি পরিবারে যখন একটি শিশু জন্মগ্রহণ করে তখন ঐ পরিবারে আনন্দের বন্যা বয়ে যায়। মা-বাবা শিশুটির সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ে তােলার জন্য নানা ধরনের পরিকল্পনা করতে থাকে। তাদের এই পরিকল্পনার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলাে শিশুর সুস্থ ও স্বাভাবিক বিকাশ। শিশুদের শারীরিক, মনাে-সামাজিক, ও বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ একটি নির্দিষ্ট নিয়ম অনুসারে ঘটলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রম হতে পারে। যখন কোনাে বাবা-মা বুঝতে পারে যে, তার শিশুটি অন্যান্য সাধারণ শিশুদের থেকে ভিন্ন আচরণ করছে অথবা বিকাশের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট নিয়ম অনুসরণ করছে না বা বয়সের তুলনায় অনেক পিছিয়ে আছে, তখন তাদের মাঝে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়। ধীরে ধীরে পরিবারটিতে নেমে আসে হতাশা। সন্তানের এই ভিন্নতাকে মেনে নেওয়ার জন্য মা-বাবাকে প্রথমত সংগ্রাম করতে হয় নিজের মনের সাথে। আবার সেই সাথে শিশুটির প্রতি সমাজের ও পরিবারের সদস্যদের বিরূপ/নেতিবাচক মনােভাবের কারণে মাবাবাকে প্রতিনিয়তই অনেক বাধার সম্মুখীন হতে হয়। 

জন্মের পর শিশুর বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে শারীরিক (বসা, দাঁড়াননা, হাঁটা, হাতের সুক্ষ্ম কাজ), মানসিক (বুদ্ধি, আবেগ, মরণশক্তি, চিন্তা, আচরণ, ব্যক্তিত্ব), সামাজিক ও যােগাযােগ ক্ষেত্রে বয়স অনুযায়ী দক্ষতা অর্জন করাকেই শিশুর স্বাভাবিক বিকাশ বলা হয়। আর বিকাশজনিত সমস্যা হলাে এমন এক ধরনের দীর্ঘস্থায়ী অবস্থা যা শিশুর মস্তিষ্ক বিকাশের সময় ঘটে থাকে এবং শিশুর শরীরের যে কোনাে অংশ অথবা সম্পূর্ণ শারীরিক প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে। শিশুদের নানা ধরনের বিকাশজনিত সমস্যা পরিলক্ষিত হয়, অটিজম সেগুলাের মধ্যে অন্যতম একটি। 

অটিজম কী? 

অটিজম কোনাে রােগ নয়। এটি স্নায়ুবিকাশজনিত সমস্যার একটি বিস্তৃত রূপ যা অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডার নামে পরিচিত। এখানে স্নায়ু’ শব্দটি স্নায়ুতন্ত্র বা মস্তিষ্কের সাথে স্নায়ুর সম্পর্ক বােঝায়।

“বিকাশজনিত’ শব্দটির মাধ্যমে শিশুর বিকাশ প্রক্রিয়াকে বােঝানাে হয়েছে। প্রাকশৈশব কাল থেকে এই সমস্যাটি শুরু হয়, যা শিশুর স্বাভাবিক বিকাশ প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রত করে। সাধারণত শিশুর জন্মের দেড় বছর থেকে তিন বছরের মধ্যে অটিজমের লক্ষণগুলাে প্রকাশ পায়। সামাজিক সম্পর্ক, যােগাযােগ এবং আচরণের ভিন্নতাই এই সমস্যাটির প্রধান বিষয়। এছাড়াও অটিজম রয়েছে এমন শিশুর শারীরিক ও বুদ্ধিভিত্তিক, শিক্ষণ প্রক্রিয়া ও ইন্দ্রিয়ানুভূতি সংক্রান্ত সমস্যাও বিশেষভাবে লক্ষণীয়। 

এটা মনে রাখা জরুরি যে, সব অটিস্টিক শিশুই এক রকম নয়। যেমন- অটিজমের কিছু সাধারণ বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা সব অটিস্টিক শিশুর মধ্যে কম-বেশি পরিলক্ষিত হয় আবার কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে প্রতিটি শিশুর জন্য আলাদা আলাদা হয়ে থাকে।

অটিজম স্পেকট্রামে বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের অটিজম লক্ষ করা যায়। অটিজম স্পেকট্রামকে একটি রংধনুর সাথে তুলনা করা যায়। রংধনুতে যেমন অনেক রং থাকে, অটিজম স্পেকট্রামেও তেমনি বিভিন্ন ধরনের অটিজম থাকে। এগুলাের মধ্যে একটি হলাে অ্যাসপার্জার্স সিনড্রোম।

অ্যাসপার্জার্স সিনড্রোম 

এটিও এক ধরনের অটিজম যা অটিজম স্পেকট্রামে দেখা যায়। এই শিশুদের আচরণগত সমস্যা থাকলেও বুদ্ধিভিত্তিক ও ভাষাগত বিকাশে কোনাে সমস্যা থাকে না। তবে ভাষার বিকাশ স্বাভাবিক এবং শব্দভাণ্ডার পর্যাপ্ত হওয়া সত্ত্বেও সামাজিক আলাপচারিতায় অংশ নিতে এদের সমস্যা হয়। এরা একই ধরনের আচরণ পুনরাবৃত্তি করে থাকে। বিশেষত অন্যের সাথে যােগাযােগের সূক্ষ্ম বিষয়গুলাে যেমন-চোখে চোখ রেখে তাকানন, অন্যের মৌখিক অভিব্যক্তি, ইশারা ইঙ্গিত, শারীরিক অঙ্গভঙ্গি এবং আবেগের বহিঃপ্রকাশ তারা বুঝতে পারে না। এরা কথার আক্ষরিক ব্যাখ্যা করে, ফলে বাগধারা, প্রবাদ, রসিকতা বা ব্যঙ্গ বুঝতে পারে না। এমন শিশুদের বিকাশ বিলম্বিত হয় না, শিক্ষাক্ষেত্রেও তারা এগিয়ে থাকে, এমনকি বুদ্ধিমত্তাও থাকে সাধারণের চাইতে বেশি। মেয়েদের তুলনায় ছেলেদের মধ্যে অ্যাসপার্জার্সের হার দশগুণ বেশি। 

এরা যে কোনাে বিষয় সঠিক ও সাবলীলভাবে পড়তে শেখে তবে বিষয়টির প্রাসঙ্গিকতা বুঝতে পারে না। সাধারণত অ্যাসপার্জার্স শিক্ষার্থীদের শব্দভাণ্ডার অনেক বেশি। খুব সুন্দরভাবে গুছিয়ে কথা বলতে পারে ও অনেক সময় তাদের পছন্দের বিষয়ের উপর দীর্ঘ আলােচনাও করতে পারে। তবে সে সময় খেয়ালই করে না যে আশেপাশের মানুষেরা সে বিষয়টিতে আগ্রহী কিনা। 

ইন্দ্রিয়ানুভূতি প্রক্রিয়ার সমস্যা এবং শারীরিক নড়াচড়ায় অসুবিধা হবার পাশাপাশি তাদের কোনাে বিষয়ের প্রতি মনােযােগ কম থাকে, সময়জ্ঞান কমে যায় এবং মাংসপেশিও শিথিল থাকে, ফলে খেলাধুলার মাধ্যমেও সামাজিক যােগাযােগ রক্ষা করা তাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়ে। 

সাংগঠনিক ক্ষমতা ও মনােযােগে সমস্যা থাকার কারণে অ্যাসপার্জার্স শিক্ষার্থীদের মধ্যে উদ্বিগ্নতা দেখা যেতে পারে। নিয়ম নীতি, বিধি, রুটিন ইত্যাদি মেনে চলতে তারা পছন্দ করে। নিয়মের হেরফের ঘটলে তারা মানসিক টানাপােড়নে পড়ে যায়।


অটিজম এর লক্ষণ গুলো কি কি?

অটিজম আছে এমন শিশুদের সাধারণ কিছু আচরণ 

  • চোখে চোখ না রাখা বা কম রাখা 
  • ডাকলে সাড়া না দেওয়া বিকাশ জনিত দক্ষতার মধ্যে অসামঞ্জস্যতা 
  • প্রাত্যহিক রুটিন পরিবর্তনে বাধা দান 
  • অতিরিক্ত চঞ্চলতা বা উত্তেজনা
  • আবেগ প্রকাশে অসুবিধা 
  • অস্বাভাবিক শারীরিক অঙ্গভঙ্গি 
  • সত্যিকার বিপদে ভয় না পাওয়া, অন্যদিকে তেমন বিপজ্জনক নয় এমন অবস্থা বা পরিবেশে অস্বাভাবিক ভয় পাওয়া
  • শারীরিক শিক্ষা, স্বাস্থ্যবিজ্ঞান ও খেলাধুলা
  • অসংগতিপূর্ণ হাসি-কান্না 
  • কোনাে কিছুর প্রতি অস্বাভাবিক আকর্ষণ
  • খাওয়া, ঘুম, মল-মূত্র ত্যাগে অস্বাভাবিকতা 
  • নিজের বা অপরের জন্য বিপজ্জনক বা ক্ষতিকর ব্যবহার 
  • অখাদ্য খাওয়া

অটিজমের মূল বৈশিষ্ট্যসমূহ 

অটিজমের বৈশিষ্ট্য ও মাত্রা প্রতিটি শিশুর ক্ষেত্রে আলাদা। মূল শনাক্তকারী বৈশিষ্ট্য হলাে- সামাজিক মেলামেশা, যােগাযােগ ও পুনরাবৃত্তিমূলক আচরণ। এই তিনটি বৈশিষ্ট্যই অটিজমের মূল লক্ষণ হিসেবে পরিচিত। অটিজমের কারণে ইন্দ্রিয়ানুভূতি, অপরের সাথে যােগাযােগ করার কৌশল এবং সামাজিক মিথস্ক্রিয়া প্রক্রিয়াগুলাে বাধাপ্রাপ্ত হয়। ফলে তাদের মধ্যে একই ধরনের আচরণ অথবা অসামঞ্জস্যপূর্ণ আচরণের উৎসাহ দেখা যায়। এটা জানা জরুরি যে, অটিজমের লক্ষণগুলাে স্নায়বিক কারণে হয় এবং একজনের সাথে আরেকজনের হুবহু মিল নেই। 

ক. সামাজিক লক্ষণসমূহ

অটিজম আছে এমন শিশুদের অধিকাংশের মধ্যেই অন্যের সাথে সামাজিক মিথস্ক্রিয়ায় গুরুতর সমস্যা দেখা যায়। জীবনের প্রথম কয়েক মাস তারা অন্যের চোখে চোখ রেখে তাকায় না। তারা অন্যের প্রতি নির্লিপ্ত থাকে এবং একা থাকতে পছন্দ করে। তারা অন্যের মনােযােগ পেতে চায় না এবং জড়িয়ে ধরা পছন্দ করে না। তারা অন্যের রাগ বা আদরের প্রতি স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া দেখায় না। 

অটিস্টিক শিশুদের কোনাে কিছু শিখতে অনেক সময় লাগে এবং তারা অন্যের চিন্তা ও অনুভূতি সম্পর্কে কোনাে আগ্রহ দেখায় না। সাধারণ ইশারা ইঙ্গিত যেমন- মুচকি হাসি, চোখ পিট পিট করা বা মৌখিক অভিব্যক্তি তাদের কাছে কম অর্থপূর্ণ বিষয়। এই সব শিশু যারা ইশারা বুঝতে পারে না তাদের কাছে ‘এদিকে এসাে’ বাক্যটি সবসময় একই অর্থ বহন করে। অথচ এই বাক্যটি ভিন্ন ভিন্ন অর্থ বহন করতে পারে। দেহভঙ্গি ও মৌখিক অভিব্যক্তি না বােঝার কারণে এসব শিশুর কাছে তার সামাজিক জগৎ বােধহীন হয়ে উঠে। 

অটিস্টিক শিশুদের উত্তেজিত ও আক্রমণাত্মক হয়ে উঠার প্রবণতা তাদের সামাজিক সম্পর্ক তৈরিতে বাধা হয়ে দাড়ায়। যখন তারা অপরিচিত ও বাইরের পরিবেশে যায় তখন তারা রেগে যায় বা হতাশ হয়, আবার তাদের কেউ কেউ নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। এসময় তারা জিনিসপত্র ভাণ্ডুর করতে পারে, অন্যকে আঘাত করতে পারে অথবা নিজের শরীরেও আঘাত করতে পারে। 

খ. যােগাযােগের সমস্যা 

যােগাযােগের অন্যতম মাধ্যম হলাে ভাষা। ভাষাগত অসুবিধার কারণে অটিস্টিক শিশুদের অন্যের সাথে যােগাযােগ স্থাপনে সমস্যা দেখা দেয়। ভাষাগত বিকাশের ক্ষেত্রে অটিস্টিক শিশুদের মধ্যে পার্থক্য লক্ষ করা যায়। কিছু অটিস্টিক শিশু কখনােই কথা বলতে শেখে না, তারা সারা জীবন নিশ্রুপ থেকে যায়। কোনাে কোনাে শিশু জন্মের কয়েক মাস পরে বাবলিং বা আধাে আধাে কথা বলতে শেখে কিনতু কিছুদিন পর সেটাও বন্ধ হয়ে যায়। আবার কারাে ক্ষেত্রে ভাষা শিখতে ৫ থেকে ৯ বছর পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। তবে অটিস্টিক শিশুরা ছবি, ইশারা ভাষা বা স্পর্শের সাহায্যে অন্যের সাথে যােগাযােগ স্থাপন করা শিখতে পারে। অটিজম আছে এমন অনেক শিশুর ভাষার ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছুটা অস্বাভাবিকতা দেখা যায়। তারা শব্দ বিন্যাস করে সঠিক বাক্য গঠন করতে পারে না, কেউ কেউ একটি শব্দ দিয়ে মনের ভাব প্রকাশ করে, কেউ কেউ যে শব্দটি শশানে সেটিই বারবার বলতে থাকে। কোনাে কোনাে অটিস্টিক শিশু কোনাে একটি নির্দিষ্ট শব্দ বলে এবং টিয়া পাখির মতাে শব্দটি বার বার এক নাগাড়ে কলতে থাকে, যাকে ইকোলালিয়া বলে । 

অনেক অটিস্টিক শিশু রয়েছে যাদের ভাষার ক্ষেত্রে খুব সামান্য সমস্যা থাকে। এরা অনেক শব্দ ব্যবহার করে | ভালােভাবে কথা বলতে পারে তবে সঠিকভাবে কথােপকথন চালিয়ে যেতে পারে না। তারা বাক্যের অর্থের তারতম্য বুঝতে পারেনা। আরেকটি বিষয় হলাে শারীরিক অঙ্গভঙ্গি, কণ্ঠস্বর উঠানামার ফলে কথার অর্থের যে ধরনের তারতম্য হয় তা তারা সঠিকভাবে বুঝে না। 

গ. পুনরাবৃত্তিমূলক আচরণ

অটিজম আছে এমন শিশুরা শারীরিকভাবে স্বাভাবিক এবং প্রায় সবারই পেশি নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা ভালাে, | কিনতু অস্বাভাবিক পুনরাবৃত্তিমূলক আচরণ তাদেরকে অন্য শিশুদের থেকে আলাদা করে রাখে। এই অস্বাভাবিক পুনরাবৃত্তিমূলক আচরণ তীব্র থেকে মৃদু হতে পারে। তাদের অনেকেই বার বার হাত নাড়ায়, পায়ের সামনের অংশের উপর ভর দিয়ে হাঁটে, অথবা কোনাে একটি বিশেষ ভঙ্গিতে দীর্ঘসময় স্থিরভাবে দাড়িয়ে থাকে। তারা অনেক সময় খেলনা গাড়ি বা ট্রেন দিয়ে খেলা করার বদলে এগুলােকে এক লাইনে সাজায়। যদি অসাবধানতাবশত কেউ তাদের এই সাজানাে গাড়ি বা ট্রেন নাড়িয়ে ফেলে তবে তারা খুব হতাশ বা বিচলিত হয়ে পড়ে। 

অটিস্টিক শিশুরা চায় তাদের চারপাশের সবকিছু যেমন আছে তেমনই থাকুক। তারা কোনাে পরিবর্তন পছন্দ করে না। তাদের দৈনন্দিন রুটিনের নির্দিষ্ট সময় অনুযায়ী খাওয়া, গােসল করা, একই রাস্তায় নির্দিষ্ট সময়ে স্কুলে যাওয়া ইত্যাদি বিষয়ে সামান্যতম হেরফের হলে তারা খুব বিরক্ত হয়। পুনরাবৃত্তিমূলক কাজ তাদের আচরণকে আগে থেকেই যুক্ত করে রাখে যেমন- শিশু ফ্যান ঘােরা ও আলাের দিকে তাকিয়ে থেকে দীর্ঘ সময় পার করে দেয় ইত্যাদি। তাদের কারাে কারাে মধ্যে সংখ্যা, চিহ্ন বা বিজ্ঞান বিষয়ে দারুণ আগ্রহ দেখা যায়।


অজিজম শিশুদের ‍কিছু গুন ও সবল দিক

অটিজমের সাথে সম্পর্কিত কিছু তত্র গুণাবলি ও সবল দিক গুলো হচ্ছে:
 
অটিস্টিক শিশুদের কোনাে বিষয়ে অসাধারণ দক্ষতা বা ক্ষমতা দেখতে পাওয়া যায়। এর সংখ্যা অতি নগণ্য তবুও এ ধরনের বিশেষ দক্ষতা তাদের জন্য বিশেষ গুরুত্ব বহন করে এবং তাদেরকে করে তুলতে পারে অসাধারণ। এটা মনে করার কোনাে কারণ নেই যে, প্রতিটি অটিস্টিক শিশুর মধ্যে এ ধরনের বিশেষ প্রতিভা থাকবে। তবে এ বিষয়ে সচেতন থাকলে তাদের সুপ্ত প্রতিভা খুঁজে বের করা সহজ হবে, শিশুটি সমাজে সমাদৃত হবে এবং তার অন্যান্য দিকের ঘাটতি কিছুটা হলেও পূরণ হবে। 

অটিস্টিক শিশুরা যে বিষয়টির উপর বেশি মনােযােগ দেয় সে দিকেই তাদের প্রতিভা বিকশিত হতে পারে । দেখা যায় ক্যালেন্ডারের দিকে মনােযােগ আছে এমন শিশুটি অনেক বিখ্যাত ব্যক্তির জন্মতারিখ বা বার সঠিকভাবে মনে রাখতে পারে, এভাবে সে একসাথে অনেক তথ্য মনে রাখতে পারে। আবার একটি কঠিন ও কৌশলী কাজকে ছােট ছােট সহজভাগে ভাগ করে এবং সেটার দিকে মনােযােগ দিয়ে তারা সেই কঠিন ও কৌশলী কাজটি সমাধা করতে পারে। 


অজিজম শিশুদের সবল দিক গুলো কি কি?

অটিজম আছে এমন শিশুদের কিছু সবল দিক হল: 

  1. সুনিপুণভাবে দেখার ক্ষমতা
  2. সুশৃঙ্খল নিয়মনীতির ধারণা, সিকোয়েন্স (ধারাবাহিকতা), প্যাটার্ন ইত্যাদি বিষয়গুলাে বুঝতে ও মনে রাখতে পারে
  3. বিস্তারিত ও মুখস্থ করার মতাে বিষয় (গণিত, ট্রেনের সময়সূচি, খেলার কোর) মনে রাখতে পারে
  4. দীর্ঘমেয়াদী স্মৃতি । 
  5. কম্পিউটার ও প্রযুক্তিগত দক্ষতা
  6. সগীত ও বাদ্যযন্ত্রের প্রতি আগ্রহ 
  7. বিশেষ পছন্দনীয় বিষয়ের প্রতি মনােযােগ 
  8. শৈল্পিক দক্ষতা।
  9. অল্প বয়সে লিখিত ভাষা পড়তে পারা বুঝতে পারুক বা না পারুক)
  10. বানান মনে রাখা
  11. সততা
  12. সমস্যা সমাধানের দক্ষতা 

অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডার-এর কারণ কী? 

এককথায় বলতে গেলে অটিজম কেন হয় এখন পর্যন্ত তার সুনির্দিষ্ট কোনাে কারণ খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে। অটিজম বিষয়ে সচেতনতা ও জ্ঞানের পরিধি বৃদ্ধির সাথে সাথে কারণ অনুসন্ধানের কাজটিও বেড়ে চলেছে। 

বিভিন্ন কারণে যে অটিজম হয়ে থাকে এ বিষয়টি বর্তমানে বিজ্ঞানসম্মতভাবে প্রতিষ্ঠিত। 

বিভিন্ন পর্যায়ে অটিজমের যে জটিল লক্ষণ দেখা যায় তা থেকে বলা যায় যে, একাধিক কারণে অটিজম হতে। পারে। জন্মপূর্ব ও জন্মকালীন ও জন্ম পরবর্তী যে কোনাে সময়ে জেনেটিক (বংশগতি) এবং ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশের প্রভাবে অটিজম হতে পারে। 

কোনাে শিশুর মধ্যে অটিজমের কিছু লক্ষণ থাকলেই তার অটিজম আছে এমন সিদ্ধান্ত দ্রুত নেওয়া যাবে না। কেবলমাত্র বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকই বলতে পারবেন শিশুটির অটিজম আছে কিনা। শিশু বিশেষজ্ঞ, মনােরােগ বিশেষজ্ঞ, শিশু মনােরােগ বিশেষজ্ঞ, শিশু স্নায়ুরােগ বিশেষজ্ঞ, মনােবিজ্ঞানী কিংবা অটিজমে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত চিকিৎসকই অটিজম নির্ণয় করবেন ।


অটিস্টিক শিশুদের শিক্ষা ও মূলধারার শিক্ষা কার্যক্রমে অন্তর্ভুক্তকরণ 

অটিস্টিক শিশুদের জন্য শিক্ষাদান কার্যক্রম খুবই নিবিড় ও বিশদভাবে হওয়া প্রয়ােজন। সেক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ পেশাজীবীদের প্রয়ােজন আছে এবং শিক্ষার্থীর আচরণ, বিকাশ, সামাজিক ও একাডেমিক প্রয়ােজনের উপর ভিত্তি করে সপ্তাহে প্রয়ােজনীয় কাজের জন্য কত সময় ব্যয় করতে হবে তা নির্ধারণ করা হয়। কেবলমাত্র একটি পদ্ধতিতে অটিস্টিক শিশুর শিক্ষাদান সম্ভব নয়, একসাথে বা ক্রমান্বয়ে একাধিক পদ্ধতির প্রয়ােগ করতে হয়। প্রায়ােগিক আচরণ বিশ্লেষণ (এপ্লাইড বিহেভিয়ার এনালাইসিস) নীতিমালার উপর ভিত্তি করে অনেকগুলাে শিক্ষাদান পদ্ধতি প্রয়ােগ করা হয়ে থাকে। 

অটিস্টিক শিক্ষার্থীদের শিক্ষায় সহায়তা প্রদান ও প্রয়ােজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তাদের সাধারণ শিক্ষা ব্যবস্থার সাথে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের প্রয়ােজনীয় সহায়তা দিতে হবে। শিশুর সবদিক ও চাহিদার সহায়তার জন্য প্রস্তুতি নিতে অভিভাবকসহ সকল সদস্যের মধ্যে যােগাযোেগ থাকা জরুরি এবং ইতিবাচক সফলতার জন্য কার্যকর কৌশল নির্ধারণ, সমন্বয়, সহযােগিতার প্রয়ােজন। শিক্ষার্থীদের শুধু শ্রেণিকক্ষে বসিয়ে দেওয়াই নয়, তাদের মূলধারার কার্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করা জরুরি। স্বল্প সময়ের জন্য হলেও কার্যকর অন্তর্ভুক্তি শিক্ষার্থীর আত্মবিশ্বাস ও দক্ষতা বৃদ্ধি করে। অটিস্টিক শিক্ষার্থীদের সফলতার জন্য তাদের প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি প্রয়ােজন। সেজন্য ছােট ছােট সাফল্যও উল্লেখ করতে হবে। অটিজমের বৈশিষ্ট্যের পাশাপাশি একটি নির্দিষ্ট শিক্ষার্থীর গুণাবলি জানা থাকলে উপযুক্ত পরিকল্পনা করতে সুবিধা হয়। 

তােমাদের শ্রেণিকক্ষে অটিস্টিক বন্ধুদের তােমরা কীভাবে সহায়তা প্রদান করতে পার 

অটিস্টিক শিশুদের সহপাঠীদের সহযােগী বন্ধু হিসেবে উল্লেখ করা হয়। সহপাঠীদের মধ্যে বন্ধুত্বের ধারণা এবং লক্ষ্য অর্জনে একতাবদ্ধতার পরিবেশ গড়ে তােলা প্রয়ােজন, যাতে অটিস্টিক শিশুরা যথাযথ সহায়তা, সম্মান নিয়ে বেড়ে উঠতে পারে। অটিস্টিক শিশুদের প্রতি সংবেদনশীলতা ও ইতিবাচক মানসিকতায় প্রায় সবাই আমরা উপকৃত হব কেননা এদের মধ্যে কেউ আমাদের ভাই, বােন, প্রতিবেশী বা আত্মীয়। অটিজমসংক্রান্ত শিক্ষা বা সংবেদনশীলতার প্রশিক্ষণ কোনাে নির্দিষ্ট শিক্ষার্থীর উপর ভিত্তি করে হবে না, তা সার্বিকভাবে হতে হবে।

অটিজম শিশুদের সাথে যা যা করনীয় 

শ্রেণিকক্ষে নির্দেশনা বুঝতে ও সামাজিক মিথস্ক্রিয়া বাড়াতে সহপাঠীদের করণীয়।

১. এক শ্রেণিকক্ষ থেকে অন্য শ্রেণিকক্ষে নিয়ে যাওয়া। 
২. শ্রেণিকক্ষের কাজ ও শিক্ষাসংক্রান্ত উপকরণ গুছিয়ে রাখা। 
৩. শ্রেণিকক্ষের জন্য নির্ধারিত রুটিন মেনে চলা। 
৪. সহপাঠীদের সাথে মেলামেশার জন্য উৎসাহ প্রদান করা। 
৫. শ্রেণি শিক্ষকের পড়ানাের বিষয়টির সারমর্ম বলা এবং মূল বিষয়টি পুনরায় বলা। 
৬. শ্রেণিকক্ষের আলােচনায় অংশগ্রহণের জন্য প্রয়ােজনীয় সহায়তা প্রদান করা। 
৭. মৌখিকভাবে অথবা যােগাযােগ সহায়ক যন্ত্রের মাধ্যমে প্রদত্ত উত্তরসমূহ লিখিতভাবে প্রকাশে সাহায্য করা।
৮. হতাশ হলে প্রয়ােজনীয় নির্দেশনা ও উৎসাহ প্রদান করা। 
৯. অন্যের সাথে যােগাযােগ স্থাপন করার জন্য সর্বদা তাকে পুরস্কৃত করা।
১০. শ্রেণিকক্ষের কাজ সঠিকভাবে করার জন্য প্রয়ােজনীয় নির্দেশনা প্রদান করা। 

সাধারণত সারাজীবন ধরে অটিজমের লক্ষণগুলাে একজনের মধ্যে থাকতে পারে, তবে যথাযথ সাহায্য, নির্দেশনা ও উপযুক্ত শিক্ষা পেলে সময়ের সঙ্গে কিছু কিছু লক্ষণের উন্নতি হয়। যাদের মাঝে অল্প মাত্রার সমস্যা থাকে তাদের উল্লেখযােগ্য উন্নতি হয় এবং তারা মােটামুটি স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারে। মাঝারি ও বেশি সমস্যাগ্রত শিশুদের ক্ষেত্রে দেখা যায় যে তারা ঠিকমতাে কথা বলতে পারে না, এবং নিজের যত্নও নিতে পারে না। তবে প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করা গেলে এবং নিবিড় প্রশিক্ষণ ও নির্দেশনা পেলে অটিস্টিক শিশুরা নানাক্ষেত্রে সফলতা পেতে পারে।

অটিস্টিক শিশুদের শিক্ষাদানের জন্য বাংলাদেশেও কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন গড়ে উঠেছে, যেমন- প্রয়াস, অটিজম ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন, সােয়াক, অটিস্টিক চিলড্রেন ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন ইত্যাদি। এ ছাড়া কিছু কুলও প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যারা অটিজম শিশুদের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণে কর্মরত রয়েছে। সরকারি পৃষ্ঠপােষকতা পেলে এ সমস্ত প্রতিষ্ঠান আরও কার্যকর ভূমিকা রাখতে ও উন্নতিতে অবদান রাখতে পারবে।

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.