রাদারফোর্ড পরমাণু মডেল ও রাদারফোর্ড মডেলের সীমাবদ্ধতা নিয়ে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করব।
রাদারফোর্ড পরমাণু মডেল (Atomic Structure of Ruther Ford)
বিজ্ঞানী রাদারফোর্ড 1911 সালে ৫ কণা বিচ্ছুরণ পরীক্ষা শেষে পরমাণুর গঠন সম্পর্কে একটি মডেল উপস্থাপন করেন। সেটি হলাে—
i. পরমাণুর দুটি অংশ : একটি নিউক্লিয়াস এবং অপরটি নিউক্লিয়াসের বাইরের অংশ।
ii. পরমাণু প্রায় সমস্ত ভর পরমাণুর আয়তনের তুলনায় খুব সূক্ষ্ম স্থানে পরমাণুর কেন্দ্রে অবস্থান করে। পরমাণুর কেন্দ্রের এ সূক্ষ্ম অংশকে নিউক্লিয়াস বলে। নিউক্লিয়াসের আকার গােলাকার এবং ব্যাস 102 - 10 cm এর মধ্যে।
iii. ভারী ধনাত্মক আধান যুক্ত কণা প্রােটন পরমাণুর কেন্দ্রে অবস্থান বৃত্তের স্পর্শক বরাবর করে। ইলেকট্রনের ভর অত্যন্ত নগণ্য। পরমাণুর প্রায় সমস্ত ভর ইলেকট্রনীয় কক্ষপথ ইলেকট্রন বেগ নিউক্লিয়াসে কেন্দ্রীভূত থাকে।
iv. পরমাণু আধান নিরপেক্ষ। পরমাণুতে ধনাত্মক আধান যুক্ত প্রােটনের ইলেক্ট্রন সংখ্যা ও ঋণাত্মক আধান যুক্ত ইলেকট্রনের সংখ্যা সমান থাকে। একটি প্রােটন যে পরিমাণ ধনাত্মক আধান বহন করে, একটি ইলেকট্রন ঠিক ঐ একই পরিমাণ ঋণাত্মক আধান বহন করে। নিউক্লিয়াস কেন্দ্রবিমুখী বল
v. নিউক্লিয়াসের বাইরে ইলেকট্রনগুলাে নিউক্লিয়াসকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন বৃত্তাকার পথে সদ্রুতগতিতে আবর্তন করে।
vi, ইলেকট্রনের উপর সবসময় দুটি বল কার্যকরী হয়।
![]() |
| পরমাণুর সন্ধিতি রায় আকর্ষণ বল। স্থির-তড়িৎ আকর্ষণ বল ও কেন্দ্রবিমুখী বলের সাম্যাবস্থা |
মনে রাখবেন : রাদার ফোর্ডের পরমাণু মডেল অনুসারে ইলেকট্রনের আবর্তন রাদার ফোর্ডের ধারণা মতে পরমাণুর নিউক্লিয়াসে ধনাত্মক আধানবিশিষ্ট প্রােটন কণা অবস্থান করে। আর পরমাণু সামগ্রিকভাবে আধান নিরপেক্ষ। তাই পরমাণুর নিউক্লিয়াসে যতগুলাে ধনাত্মক কণা অবস্থান করবে ঠিক সমসংখ্যক ঋণাত্মক আধানযুক্ত ইলেকট্রন কণাও নিউক্লিয়াসের চারপাশে বিভিন্ন অবস্থানে অবস্থান করবে। সূর্যকে কেন্দ্র করে নিজ নিজ কক্ষপথে গ্রহগুলাে | যেভাবে পরিভ্রমণ করে ঠিক একইভাবে ইলেকট্রনগুলাে নিউক্লিয়াসকে কেন্দ্র করে নিজ নিজ কক্ষপথে তীব্র বেগে পরিভ্রমণ করে থাকে।
vi, ইলেকট্রনের উপর সবসময় দুটি বল কার্যকরী হয়।
(ক) নিউক্লিয়াসের ধনাত্মক আধান যুক্ত প্রােটন ও নিউক্লিয়াসের বাইরের ঋণাত্মক আধান যুক্ত ইলেকট্রনের মধ্যে একটি স্থির। তড়িৎ আকর্ষণ বল । ইলেকট্রনের উপর এ স্থির তড়িৎ আকর্ষণ বলের অভিমুখ বৃত্তাকার পথে ঘূর্ণায়মান ইলেকট্রনের ক্ষেত্রে নিউক্লিয়াসের অভিমুখে হয়, এটি কেন্দ্রমুখী বল।(খ) ইলেকট্রন নিউক্লিয়াসকে কেন্দ্র করে বৃত্তাকার পথে সমদ্রুতিতে পরিভ্রমণের সময় ইলেকট্রনের উপর বৃত্তাকার পথের ব্যাসার্ধ বরাবর নিউক্লিয়াসের বহির্মুখী একটি কেন্দ্রাতিগ (Centrefugal force) বলের সৃষ্টি হয়। এটি কেন্দ্র বিমুখী বল ।
vii. ইলেকট্রনের ঘূর্ণনের সময় ক্রিয়ারত এ আকর্ষণ বল ও নিউক্লিয়াস বহির্মুখী কেন্দ্রাতিগ বল সমান ও বিপরীতমুখী হওয়ায় ইলেকট্রন নিউক্লিয়াস থেকে দূরে যেতে বা নিউক্লিয়াসের নিকটে আসে না। উপরন্তু সতিতে নির্দিষ্ট কক্ষপথে নিউক্লিয়াসকে কেন্দ্র করে সর্বদা আবর্তন করে।
মনে রাখবেন : রাদারফোর্ড পরমাণুর মডেলকে সৌর মডেলের সাথে তুলনা করা হয় কারণ— রাদারফোর্ডের পরমাণু মডেল সাধারণ বলবিদ্যার উপর প্রতিষ্ঠিত। রাদারফোর্ড তাঁর পরমাণু মডেলকে সৌরজগতের সাথে তুলনা করেন। সূর্যকে কেন্দ্র করে নিজ নিজ কক্ষ পথে বিভিন্ন গ্রহগুলাে যেভাবে পরিভ্রমণ করে ঠিক একইভাবে ইলেকট্রনগুলাে নিউক্লিয়াসকে কেন্দ্র করে নিজ নিজ কক্ষপথে তীব্র বেগে পরিভ্রমণ করে। তাঁর ধারণা মতে নিউক্লিয়াসের চারদিকে ঘূর্ণায়মান ইলেকট্রনের মধ্যে বিদ্যমান স্থির বৈদ্যুতিক আকর্ষণজনিত কেন্দ্রমুখী বল এবং অপরটি ঘূর্ণায়মান ইলেকট্রনের কেন্দ্রবিমুখী বল। এ দুই প্রকার বলের মান পরস্পর সমান কিন্তু বিপরীতমুখী। তাই বিজ্ঞানী রাদারফোর্ড পরমাণু মডেলকে সৌর মডেলের সাথে তুলনা করেন।
রাদারফোর্ড মডেলের সীমাবদ্ধতা:
রাদারফোর্ড মডেলের বেশ কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। যেমন
১। সৌর জগতের তড়িৎ নিরপেক্ষ গ্রহগুলি মহাকর্ষীয় শক্তির জন্য সূর্যের চতুর্দিকে ঘুরে কিন্তু পরমাণুর বিভিন্ন কক্ষপথে আবর্তনকারী ইলেকট্রনসমূহ ঋণাত্নক চার্জ বিশিষ্ট এবং এরা পরস্পরকে বিকর্ষণ করে
২। ম্যাক্সওয়েলের তত্ত্বানুসারে, যখন কোন আধানযুক্ত কণার ত্বরণ থাকে তখন উহা শক্তি বিকিরণ করে। নিউক্লিয়াসের চারদিকে। ঘূর্ণনরত ইলেকট্রন সমূহের কেন্দ্রমুখী ত্বরণ থাকে। সুতরাং কক্ষপথে আবর্তনকারী ইলেকট্রনসমূহের অবিচ্ছিন্নভাবে শক্তি বিকিরণ করার কথা। এভাবে ক্রমাগত শক্তি বিকিরণ করে ধনাত্নক নিউক্লিয়াসের আকর্ষণে ইলেকট্রনের কক্ষপথ সর্পিল আকারে কমতে কমতে অবশেষে নিউক্লিয়াসে এসে ইলেকট্রন পতিত হয়ে পরমাণু ধ্বংশ হওয়ার কথা। অথচ তা হয় না।
৩। রাদারফোর্ড মডেলে আবর্তনরত ইলেকট্রনের কক্ষ পথের কোন আকার ও আকৃতির ধারনা দেয়া হয়নি।


